অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক:
সিস্টেম হ্যাক করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরে পেতে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির চুরি যাওয়া অর্থ দ্রুত ফিরে পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করলেও সংশ্লিষ্ট মনে করছেনম এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) এবং ওই ব্যাংকের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার নিষ্পত্তি হতেই লেগে যাবে কমপক্ষে তিনবছর। এরপর আাছে আপিল, অভিযোগ পুনর্বিবেচনা, রিভিউ প্রভৃতি আইনি ধাপ। সব রায় যদি বাংলাদেশর পক্ষে যায়, তবেই চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়া যেতে পারে।
মামলার সকল ধাপ পার হওয়ার বাংলাদেশের অর্থ ফিরে পাওয়াটা পুরোপুরি নির্ভর করবে আরসিবিসি কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার উপর। ফিলিপাইনের এই ব্যাংকটি চাইলে দ্রুততম সময়ে টাকা পরিশোধ করতে পারে, আবার অর্থ পরিশোধে গড়িমসি করে ঝুলিয়ে রাখতে পারে বছরের পর বছর। সে ক্ষেত্রে আদালতে ফের মামলা করতে হবে। মোটকথা দীর্ঘসূত্রতার ফাঁদে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে এটা ঠিক যে, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবৈধ অ্যাকউন্টে টাকা লেনদেরে জন্য আরসিবিসিকে জরিমানা করার পর মামলায় বাংলাদেশই অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পবব যে মামলাটি বাংলাদেশ করেছে
এপ্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টে সকাল ৭টার দিকে (নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় রাত ৮টা, ৩১ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা দায়ের করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড) মামলা নিষ্পত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সহায়তার লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন বিএফআইইউ প্রধান। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও বিএফআইইউ উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে রাজি হাসান বলেন, ‘রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে এ পর্যন্ত ৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। মলা পূর্ণ গতিতে চলছে। তিন বছরের মধ্যে এটি নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করা যায়। এক্ষেত্রে ফেড ও সুইফট কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সবধরনের সহযোগিতা দেবে।’
ছয় মাসের মধ্যে মামলার প্রথম শুনানি শুরু হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সুদ ও ক্ষতিপূরণসহ চুরি যাওয়া সমুদয় অর্থ দাবি করেছে।’ আজমালুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসি, ১৫ ব্যক্তি ও ২৫ অজ্ঞাত ব্যক্তিসহ ৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেছে।’
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সুইফট সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া ম্যাসেজ পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। ওই অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। সেখান থেকে ওই অর্থ ফিলিপাইনের মুদ্রা পেসোতে রূপান্তরের পর দুটি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়। রিজার্ভ চুরির এই ঘটনায় দোষী প্রমাণ হওয়ায় গত ১০ জানুয়ারি আরসিবিসির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতোকে সাজা দেন ফিলিপাইনের আদালত। এছাড়াও তাকে সর্বমোট ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়েছে।
চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফিরে আসে গত দুই বছরে, আর ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ফিরে এসেছে মাত্র ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফিলিপাইনের একটি বড় ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে ওই টাকা উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারে তেমন কোনও অগ্রগতি নেই। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনও হদিস মেলেনি।
ওই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করা হবে। এজন্য দেশটিতে দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের ফি নিয়ে একটি চুক্তিও করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, চুরি যাওয়া ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধার করে দিতে পারলে ল’ ফার্ম দুটিকে সেই অর্থের ১০ ভাগ দেওয়া হবে।
এদিকে রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে ফিলিপাইন সরকারের সংশ্লিষ্টরা শুরুতে সব ধরণের সহযোগিতা দিয়ে আসলেও হঠাৎ রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক করপোরেশন (আরসিবিসি) বলেছে, এর দায় বাংলাদেশের। এরপরই বলতে গেলে বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধার প্রক্রিয়া। সম্প্রতি এ অর্থ ফিরে পেতে ফের তৎপর হয়েছে বাংলাদেশ। এ উদ্দেশে গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি প্রতিনিধি দল বর্তমান ফিলিপাইনে অবস্থান করছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে গত ২ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে মামলা হয়েছে। তবে প্রায় ৬ কোটি ডলার উদ্ধার হবে কিনা, হলেও কতো বছর লেগে যাবে তাা স্পষ্ট নয়।
সব সময় আপডেট নিউজ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন- সবুজ বিডি ২৪